ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন লন্ডনের দুটি সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ পেয়েছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস (এফটি)-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জব্দ করা দুটি সম্পত্তির একটি লন্ডনের অভিজাত এলাকা ১৭ গ্রসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, যা ২০১০ সালে ৬.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা হয়। অপরটি উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসে অবস্থিত একটি বাড়ি, যার মূল্য ২০১১ সালে ছিল ১.২ মিলিয়ন পাউন্ড। উভয় সম্পদই অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছিল।
জনপ্রিয় ব্রিটিশ দৈনিক ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জব্দ হওয়া বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের মালিক বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের ছেলে। আর সালমান এফ রহমান বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
প্রতিবেদন আরও বলছে, শায়ানের জব্দকৃত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টটি লন্ডনের অভিজাত এলাকা ১৭ গ্রসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত। যেটি ২০১০ সালে ৬.৫ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা হয়। আর বাড়িটি উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসে অবস্থিত, ২০১১ সালে সেটি কেনা হয় ১.২ মিলিয়ন পাউন্ডে।
যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোলের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বোন তথা যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা মাঝেমধ্যে শায়ানের গ্রেশাম গার্ডেনসের ওই বাড়িতে থাকতেন। তবে এখনো তিনি সেখানে থাকেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়।
ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি, একটি চলমান ফৌজদারি তদন্তের অংশ হিসেবে লন্ডনের ১৭ গ্রোভনার স্কয়ার ও গ্রেশাম গার্ডেন্সে অবস্থিত সম্পত্তি জব্দের আদেশ (ফ্রিজিং অর্ডার) পেয়েছে এনসিএ। এর চেয়ে বেশি কিছু এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, সালমান ও শায়ান এফ রহমান উভয়েই অর্থ আত্মসাতের তদন্তে সন্দেহভাজন।
ফাইল থেকে জানা গেছে, এই সম্পত্তিগুলো আইল অভ ম্যান-এর অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়।
শায়ানের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের মক্কেল জোরালোভাবে যেকোনো অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তিনি অবশ্যই যুক্তরাজ্যে যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করবেন।’
তিনি আরও বলেন করেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এখন প্রকাশ্য বিষয়। সেখানে শত শত মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।’
মন্তব্যের জন্য সালমান এফ রহমান ও শেখ রেহানার সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।
২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ শাসন করা শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেছেন, পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানসহ বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যম আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল।
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূস বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুরকে নিয়োগ দেন। বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠদের আত্মসাৎ করা বিপুল অর্থ উদ্ধারের দায়িত্বে আছেন নতুন গভর্নর।
অন্তর্র্বতী সরকার ইতিমধ্যে অনেকের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ও সম্পত্তি জব্দ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সহযোগিতায় অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে।
চলতি মাসে আওয়ামী লীগেকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্র্বতী সরকার। দলটির সমর্থকরা অভিযোগ করেন, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ।
অন্তর্র্বতী সরকারের দুটি দুর্নীতির তদন্তে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে ও লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের নাম আসার পর তিনি এই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন।
টিউলিপ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে জানুয়ারিতে তিনি পদত্যাগ করেন।